
আফতাবনগরে নাগরিক হাসপাতালে এক বছরের শিশুর চিকিৎসা বিভ্রাট, বেঁচে ফিরলেও থেকে গেল ট্রমা
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৫: রাজধানীর আফতাবনগরের একটি স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতাল “নাগরিক হাসপাতালে” এক বছরের একটি শিশুর চিকিৎসা নিতে গিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা, অযোগ্যতা ও অবহেলার শিকার হয় পরিবার। মাত্র এক বছরের শিশুর শরীরে ১৭ বার ক্যানুলা প্রয়োগের চেষ্টা, NICU-তে তালা দিয়ে অভিভাবককে বাইরে রাখা, এবং শিশুর চিৎকার—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ঐ শিশুর বাবা-মা।
ঘটনার শুরু ১ অক্টোবর শিশুটির জন্মদিন পালন শেষে হঠাৎ ৩ অক্টোবর তার অসুস্থতা দিয়ে। পরদিন রাত ১২টায় জরুরি ভিত্তিতে আফতাবনগরের নাগরিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার পানিশূন্যতা শনাক্ত করে দ্রুত ভর্তি করান। এরপর শুরু হয় ক্যানুলা দেওয়ার চেষ্টা—যা একপর্যায়ে হয়ে দাঁড়ায় এক শিশুর শরীরের উপর নিষ্ঠুর প্র্যাকটিসের মঞ্চ।
প্রথমে নার্সরা ব্যর্থ হন, পরে NICU-তে নিয়ে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে ক্যানুলা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। রাত ২টার দিকে একবার সফলভাবে ক্যানুলা লাগানো হয়। কিন্তু পরদিন দেখা যায় শিশুটির হাত ফুলে গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী নার্সরা বিষয়টি অবহেলা করেন। রাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে হাসপাতালের এক পরিচালক এসে স্বীকার করেন, স্যালাইন ভুলভাবে শরীরের বাইরে পুশ হওয়ায় এমনটা হয়েছে।
ক্যানুলা খুলে আবার NICU-তে নিয়ে শিশুর মা-বাবার অনুরোধ উপেক্ষা করে গেইটে তালা দেওয়া হয় এবং পুনরায় ক্যানুলা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে শিশুর অসহনীয় চিৎকার শুনতে হয় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পিতামাতাকে। হঠাৎ চিৎকার থেমে গেলে আশঙ্কা আরও বাড়ে।
শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা চেষ্টা করেও ক্যানুলা দিতে পারেনি এবং বলেন, শিশুর শরীর এতটাই পানিশূন্য যে কোথাও ভেইন পাওয়া যাচ্ছে না।
অবশেষে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে যাওয়া হয় এক পরিচিত শিশু চিকিৎসকের কাছে—যিনি OT-তে অপারেশন করছিলেন, তবুও জরুরি ভিত্তিতে শিশুটিকে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই সফলভাবে ক্যানুলা স্থাপন করেন। শুরু হয় সঠিক চিকিৎসা, এবং চারদিনের চিকিৎসার পর শিশুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
এই অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে শিশুটির বাবা ক্লাসরুম বাংলাদেশের সি,ই,ও মন্জুরুল করিম খান বলেন
> “যদি নাগরিক হাসপাতালের দেওয়া ভুল ধারণা অনুযায়ী আমরা বাড়ি নিয়ে চলে যেতাম, তাহলে হয়তো আজ আমার মেয়েকে আমরা হারাতাম।”
শিশুর শরীরে পাওয়া যায় অন্তত ১৭টি ক্যানুলার চিহ্ন—যা থেকে স্পষ্ট, তারা বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে এবং সেই তথ্য গোপন রেখে বলা হয়েছে “সবচেষ্টা করা হয়েছে, কিছুই সম্ভব না”।
নাগরিক হাসপাতালের দিকে উঠছে প্রশ্ন:
এই ঘটনায় চিকিৎসকের দেরি করে উপস্থিত হওয়া, নার্সদের অপেশাদারিত্ব, NICU-তে অনুপ্রবেশে নিষেধাজ্ঞা মানলেও মানবিকতার অভাব এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শিশুকে ভুলভাবে চিকিৎসা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে।
যদিও শিশুটির পরিবার হাসপাতালকে ট্যাগ করেনি কিংবা আইনগত পদক্ষেপ নেয়নি, তারা ভবিষ্যতের অভিভাবকদের জন্য এই ঘটনা তুলে ধরেছে যেন সচেতনতা বাড়ে।
বিশেষ সতর্কতা:
নাগরিক হাসপাতালের ডাক্তারদের নিয়ে আলাদা ক্ষোভ না থাকলেও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
নার্সিং স্টাফদের দক্ষতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
শিশুদের NICU ব্যবস্থাপনায় আরও মানবিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শেষ কথা:
একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন নিয়ে এমন ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ যেন আর কোনো অভিভাবককে দেখতে না হয়—এই প্রত্যাশাই করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে ও এক চিকিৎসকের সহানুভূতির কারণে শিশুটি আজ জীবিত ও সুস্থ।
সতর্কবার্তা:
এই প্রতিবেদনটি একটি বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে রচিত, যার উদ্দেশ্য কারো সম্মানহানি নয়, বরং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে কোন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—তা এ ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল।
Leave a Reply